সোনারগাঁও দর্পণ :
‘দমদমা’ প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। ঐতিহ্যবাহী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রভাবশালী মোগরাপাড়া ইউনিয়নের দমদমা গ্রামটি মাদকমুক্ত গ্রাম তথা দমদমা সমাজকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করেছেন গ্রাম পাঞ্চায়েত কমিটি।
“মাদককে না বলুন, মাদক ব্যবসায়ী যেখানে, প্রতিরোধ সেখানে” এই শ্লোগানে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির নির্দেশে স্থানীয় যুবসমাজের উপস্থিতিতে শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকালে দমদমা বয়েজ ক্লাবে আয়োজিত মাদক বিরোধী আলোচনা সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সন্ধ্যার আগে আলোচনা সভা শেষ হওয়ার পর থেকে দমদমা সমাজ তথা বিশেষ খানা, সাউপাড়া, দমদমা, আমতলা (এ সকল গ্রামের বাসিন্দারাও দমদমা সমাজের অন্তর্ভূক্ত) গ্রামের কোন স্থায়ী বা অস্থায়ী (ভাড়াটিয়া) বাসিন্দারা যদি মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িত থাকে তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে তাকে সমাজচ্যুত করার পাশাপাশি সমাজ থেকে বিদায় করে আইনের কাছে সোপর্দ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
দমদমা বয়েজ ক্লাবে সভাপতি নাহিদ মোল্লার সঞ্চালনায় দমদমা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি কবিরুজ্জামান মোল্লার সভাপতিত্বে দমদমা জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক পঞ্চায়েত কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য মোস্তফা কামাল বাবুল বলেন, এক সময় দমদমা গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের অত্র ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রামের মানুষ সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতো।
সম্প্রতি এই গ্রামের কিছু যুবককে ব্যবহার করে অন্যান্য গ্রামের বখাটে লোকজন মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে ফেলে। ফলশ্রæতিতে আমাদের নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সুস্থ্য ও মাদকমুক্ত সমাজ জীবন উপহার দিতে দমদমার যুবসমাজ মাদক নির্মূলে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার দমদমা সমাজ তা-ই করবে।
মাদক নির্মূল করতে গিয়ে যদি সমাজের কোন পঞ্চায়েতের লোকজন বাধা দেয়, মাদক ব্যবসায়ী ও গ্রহণকারীদের প্রকাশ্যে বা গোপনে সাহস যোগায়, সে যদি আমার নিজের ঘরের লোকও হয় তাকেও সমাজচ্যুত করে সমাজ থেকে বের করে দেওয়া হবে। এছাড়া, দমদমা সমাজের সকল বাড়ির মালিকদেরকে তাদের ভাড়াটিয়াদের মাদক ব্যবসা, গ্রহণ ও শিষ্টাচারহীন কোন কাজের সাথে জড়িত পাওয়া যায়, তাহালে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজের পক্ষ থেকে সেই ভাড়াটিয়াদেরকেও এলাকা থেকে বের করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
গোষ্ঠীগত দ্ব›দ্ব দমদমা গ্রামের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা যুবসমাজের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রাম প্রধান সৈয়দ হোসেন বলেন, যেখানে আমাদের সমাজের সম্মান জড়িত সেখানে গোষ্ঠীগত দ্ব›দ্ব গৌন বিষয়। এখন থেকে কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে বিবেচনায় রেখে কোন বিচার বা কাজ হবেনা। বিচার হবে দোষ দেখে। আর মাদক যেহেতু যেকোন অপরাধের প্রথম শত্রæ, তাই আগে প্রথম শত্রæকে শেষ করতে কোন রকম ছাড় দেওয়া হবেনা।
মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও দমদমা পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যুব সমাজের যে কোন ভালো কাজের সাথে ছিলাম আছি এবং থাকব। ভবিষ্যতে আমরা বেঁচে থাকতেই দেখে যেতে চাই, আমাদের যুব সমাজ যে কোন সামাজিক সমস্যা সমাধানে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিচ্ছে। এখন থেকে সকল আচার-বিচার তারা করবে আমরা পিছন থেকে তাদের সহযোগিতা করব মাত্র। কিন্তু এটাকে ব্যবহার করে যেন কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবতি না হয়ে কোন অপরাধে না জড়ায় সে দিকে সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানান।
মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আবুল কালাম প্রধান বলেন, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কে কার ভাই, কার বাবা, কার মামা-কার কি সেগুলো দেখার বা শোনার সময় এখন না। এখন সময় আমাদের গ্রামের, সমাজের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা। এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে স্বজন প্রীতি, আত্মীয়করণকে পায়ে ঠেঁলে যুব সমাজকে সাথে নিয়ে যে কোন সমস্যা সমাধানই মুল লক্ষ্য।
পরে আলোচনা সভার বার্তা সমাজের সকলের কাছে পৌঁছে দিতে এবং সমাজের মুরুব্বীদের দিক-নির্দেশনায় দমদমা সমাজের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উপস্থিত সকল যুবক ওয়াদাবদ্ধ হয়।
Post a Comment