সোনারগাঁও দর্পণ :
সোনারগাঁওয়ে জাহিদ ও মেহেদী নামে দুই ছিনতাইকারীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। শুক্রবার (৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১০ টা ৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে জাকির হোসেন জিকু এবং তার বড় ভাই দমদমা গ্রাম প্রধান সৈয়দ হোসেনের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, দমদমা গ্রামের জাকির হোসেন জিকুর বড় ছেলে ও সোনারগাঁও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) দাবিদার জাহিদ এবং তার ছোট ছেলে মেহেদী হাসান মোগরাপাড়া ইউনিয়নের দমদমা-কালাদরগা রোডের দমদমা ব্রীজ, দলদার, বড় সাদীপুর- মোগরাপাড়া বাজার রোডের বিশেষখানা, ষোলপাড়া আমতলা, লেবুছড়া, সাহচিল্লাহপুর, কাবিলগঞ্জ, সোনারগাঁও সরকারি কলেজ, মোগরাপাড়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় জাহিদ ও মেহেদীর ছিনতাই বাহিনীর সদস্যদের সহয়তায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে ছিনতাই করে সর্বস্ব লুট করে আসছিল।
এমনকি এ সমস্ত এলাকায় ভাড়াটিয়া দিন-মজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ সাথে থাকা সকল মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় জাহিদ-মেহেদী গ্রুপ। প্রতিদিন বিভিন্ন স্পটে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় তারা।
ছিনতাইয়ের কবলে পড়া ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ভাড়াটিয়া হওয়ায় থানা পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায়না। দীর্ঘ দিন প্রতিনিয়ত এ ধরণের ঘটনায় এ সকল এলাকার ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র চলে যাওয়ায় স্থানীয় বাড়ির মালিকরাও পড়েছেন বিপাকে।
এমনকি এ সকল এলাকার ভাড়াটিয়ারা তাদের আত্মীয়-স্বজনকে তাদের বাড়িতে আসলে সাবধানে আসার পরামর্শও দিতেন বলে স্থানীয়রা জানায়। এক কথায় জাহিদ ও মেহেদী গ্রুপের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে স্থানীয়রা।
এদিকে, থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে এ সকল বিষয় জানালেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় আরও ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে ভুক্তভোগী গ্রামের বাসিন্দারা।
এরই ধারাবহিকতায় শুক্রবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে ষোলপাড়া আমতলা এলাকার আরশাদ স্বর্ণকারের বাড়ির ভাড়াটিয়া বরিশাইল্লা শাহিনের এক আত্মীয় বেড়াতে আসে। শাহিনের বাড়িতে তার আত্মীয় যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে আমতলা নামক স্থানে ৫ হাজার টাকা ও মোবাইল রেখে তাকে মারধর করে বিদায় দেয় জাহিদ, মেহেদী ও তার বাহিনীর ৫/৭ জন সদস্য। ভুক্তভোগী ওই আত্মীয় এ তথ্য শাহিনকে জানালে শাহিন, জাহিদ ও মেহেদীর বাড়িতে গিয়ে তাদের বাবা জাকির হোসেন জিকুকে জানায়। জাকির হোসেন জিকু ছেলেদের শাসন না করে বিচার নিয়ে বাড়ি যাওয়ায় উল্টো শাহিনকে চরথাপ্পর মেরে বিদায় করে দেয়। শাহিন এ কথা তার ষোলপাড়া এলাকায় গিয়ে জানালে ষোলপাড়া মসজিদে তারাবিহ নামাজ শেষে মুসল্লীরা ক্ষোভে ফেটে পরেন এবং মসজিদের মাইকে এলাকায় ডাকাত পরেছে ঘোষণা দেয়। মাইকের ঘোষণা শুনে দমদমা, কালাদরগাহ (গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ), দলদার, বড় সাদীপুর, ষোলপাড়া আমতলা, বিশেষখানা, লেবুছড়া গ্রামের কমপক্ষে দেড় সহস্রাধিক গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাহিদ ও মেহেদিকে ধরতে তার বাড়িতে যায়। এ সময় তার বাড়ি থেকে তার এক আত্মীয় রাম দা নিয়ে এলাকাবাসীকে মারতে উদ্যত হলে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী জাকিরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় রাম দা নিয়ে তেড়ে আসা ওই আত্মীয় দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নিরাপদে যায়।
এদিকে, জাকিরের বাড়িতে হামলার পাশাপাশি জাকিরের বড় ভাই দমদমা গ্রাম প্রধান সৈয়দ হোসেন তার ভাতিজার দিনের পর দিন বিভিন্ন অপকর্মের কথা জেনেও বিচার না করায় এবং জাহিদ ও মেহেদীর ছিনতাইয়ের কাজে সৈয়দ হোসেনের দুই ছেলে মাহফুজ ও মাহিন সহযোগিতা করে এমন অভিযোগে সৈয়দ হোসেনের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর চালায়।
এ সময় উত্তেজিত জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দমদমা গ্রামের উপস্থিত মুরুব্বিরা বাড়ি-ঘরে নারি ও শিশু রয়েছে জানিয়ে আগুন দেওয়া থেকে ক্ষুব্দ ভুক্তভোগীদের বিরত রাখতে সক্ষম হোন।
এরআগে মসজিদের মাইকে গ্রামে ডাকাত হামলার খবর শুনে ওই এলাকায় টহলরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি গাড়ি দমদমা গ্রামে প্রবেশ করে জাহিদ ও মেহেদীকে খুঁজেছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
এদিকে, রাত সাড়ে ১২ টার দিকে সাহেব বাড়ি ও গোহাট্টা গ্রামের মসজিদের মাইকে ডাকাত পরেছে বলে ঘোষণা দিতে শোনা যায়।
Post a Comment