সোনারগাঁও দর্পণ :
আলহামদুলিল্লাহ্। বছর ঘুরে আবারও আমাদের মাঝে উপস্থিত পবিত্র মাস মাহে রমজান।
বাংলা, ফরাসি, উর্দু ‘সাওম’ শব্দের অর্থ ‘রোজা’। সাওম এর অর্থ বিরত থাকা। সাওম এর বহুবচন হলো ‘সিয়াম’।
আল্লাগ সোবহান তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারাহ এর ১৮৩ ও ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো; যেমন দেওয়া বিধান দেওয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
এছাড়া, একই সুরার ১৮৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সোবহান তায়ালা বলেন, “ আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাত্রির কালোরেখা হতে উষার শ্রভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।
মাহে রমজানকে আল্লাহ তিন ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম দশ দিন রহমত, পরের দশ দিন মাগফিরাত এবং শেষ দশ দিন নাজাত।
শেষ দশ দিন অর্থাৎ নাজাতের দশ দিনের মধ্যে আল্লাহ সোবহান তায়ালা একটি দিনকে হাজার বছরের চেয়ে উত্তম গুণ দান করেছেন। আর সেটি হলো ‘লাইলাতুল কদর’।
পবিত্র হাদিসে এসেছে, লাইলাতুল কদরকে নাজাতের দশ দিনের মধ্যে বেজোড় রাতে খুঁজতে নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদিসে এসেছে, একদিন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র জুম্মার দিন খোৎবা দিতে মিম্বারে উঠছিলেন। মিম্বারে প্রথম সিড়িতে পা দিয়ে বলেছেন আমিন। দ্বিতীয় সিড়িতে পা দিয়ে বলেছেন আমিন, একইভাবে তৃতীয় সিড়িতে পা দিয়ে বলেছেন আমিন।
হুজুরপাকের এমন আচরণে উপস্থিত সাহাবিরা কিছুটা বিচলিত হলেন এবং নামাজ শেষে নবিজীর কাছে ভয়ে ভয়ে সম্মানের সাথে এর কারণ জানতে চাইলেন।
নবিজী বললেন, ‘আমি যখন প্রথম মিম্বারে পা রাখতে যাই তখন হযরত জিবরীল (আঃ) ওহি আনলেন। জানালেন, মা-বাবাকে জীবিত পেয়েও যে তাদের খেদমত করে মন জয় করতে পারলোনা সে ধ্বংস হয়ে যাক। আমি বললাম আমিন।
দ্বিতীয় মিম্বারে পা রাখার সময় জানালেন, মাহে রমজান পেয়েও যে নিজের গুণাহ মাফ করাতে পারলো না সে ধ্বংস হয়ে যাক। আমি বললাম আমিন।
তৃতীয় সিড়িতে পা দেওয়ার সময় জানালেন, আপনার নাম শুনে যে দরুদ পাঠ করলো না, সে ধ্বংস হোক’। আমি বললাম আমিন।
এতেই বুঝা যায় যে, পবিত্র মাহে রমজানকে আল্লাহ কতো গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন।
রোজার বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে, সাবালক, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি, রোজা পালনে সক্ষম সুস্থ্য সকল নর-নারীর জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ বা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। তবে, নারীদের মাসিককালীণ, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, অক্ষম ব্যক্তি যাদের সুস্থ্য হয়ে রোজা পালনের সামর্থ থাকবেনা বা সুস্থ্য হয়ে রোজা রাখতে পারবেন না বলে মনে হয়, তাদের জন্য ফিদিয়া দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, প্রতিটি রোজার জন্য একটি করে সদকাতুল ফিতরের সমান দান করতে। আর এটি তাদেরই দেওয়া যাবে যারা যাকাত নেওয়ার যোগ্য।
অর্থাৎ আল্লাহ সোবহান তায়ালা রমজানকে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ করে বান্দাদের মধ্যে দিয়েছেন তা সহজেই অনুমেয়।
তাই আসুন, আমরা সকলে পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত পেতে আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য এর যথাযথ পবিত্রতা রক্ষা করে সত্যিকারের আত্মসুদ্ধির জন্য রোজা পালন করি।
সকলকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। খোশ আমদেদ মাহে রমজান।
Post a Comment