সোনারগাঁও দর্পণ :
সহযোগিদের সহায়তায় স্বামীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি রাজধানীর হাজারিবাগ এলাকায় ঘটলেও নিহত আরিফ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যদের দাবি, আরিফকে গত ২০ জানুয়ারী সোমবার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে, আরিফ হত্যার পর তার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে পুলিশকে জানানো এবং পুলিশকে দিয়ে বিষয়টি মামলায় না গড়ানোর প্রস্তাবে হতাশ আরিফের পরিবারের ধারণা, কোন অনৈতিক সুবিধা পেয়ে পুলিশ অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। যদিও নিহত আরিফের পরিবারের সদস্যদের বিচক্ষণতায় এবং সংশ্লিষ্ট থানার বড় বাবুর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। নিহত আরিফ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের মৃত আবুল সরদারের ছোট ছেলে।
জানাগেছে, প্রায় ১৩ বছর আগে আবুল সরদারের ছোট ছেলে আরিফ (৩২)। তারই মেঝ ভাই জাহাঙ্গীরের শ্যালিকা কুলসুমের সাথে প্রথমে প্রেম পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় বরিশাল জেলার হিজলা থানার কাউইরা ইউনিয়নের পত্তনিভাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রহিম চৌধুরীর মেয়ে কুলসুমের সাথে। বারো বছরের সাংসারিক জীবনে তাদের সংসারে দুটি পুত্র সন্তান আসে। বড় ছেলে হোসাইন (১২) ক্লাশ সেভেনে লেখাপড়া করে। আর ছোট ছেলের নাম আরাফ (৫)। ৫/৬ বছর আগে আরিফের মা মারা যাওয়ার পর আরিফ কিছুটা ভবঘুরে স্বভাবের হয়ে যায়। সে কখনো সিএনজি, কখনো বা অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন পেশায় তার জীবন নির্বাহ করতো। কিন্তু আয় করা টাকার বেশিরভাগ সময় জুয়া খেলে নষ্ট করতো। এ নিয়ে সংসারে কলহ লেগেই থাকতো। পরে তার স্ত্রী তাকে (আরিফ) ছেড়ে দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির হাজারীবাগের তল্লাবাগ এলাকায় ১৮/১২ এ বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করতো। পাশাপাশি একই এলাকার ভাড়াটিয়া এনায়েতের স্ত্রী সেলিনার মালিকানাধীন স্থানীয় গোল্ডেন ড্রীমস বিউটি পার্লারে কাজ করতো।
এদিকে, আরিফ তার সন্তানদের না দেখতে পেয়ে এবং সন্তানদের কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে যায়। অপরদিকে, পারিবারিক কলহের জেরে প্রায় মাস তিনেক আগে আরিফকে ডিভোর্স দিবে বলে মৌখিক খবর পাঠায় স্ত্রী কুলসুম। এতে আরিফ ভালবেসে বিয়ের পর দুই সন্তানের মা হওয়া কুলসুমকে নিয়ে সংসার করার উদ্দেশ্যে মাস দেড়েক আগে তার মেঝ ভাই ও ভায়রা জাহাঙ্গীরের সহায়তায় সংসারে মনযোগী হওয়ার শপথ করে পারিবারিক সমঝোতায় রাজধানীর হাজারীবাগে কুলসুমের সাথেই বসবাস করতো। পাশাপাশি আরিফ সেখানে একটি খাবার হোটেলে কাজ নেয়।
এদিকে, আরিফের স্ত্রী পার্লারে কাজ করা কুলসুমের প্রায়ই বাড়িতে দেড়ি করে আসা নিয়ে সন্দেহ হয় এবং কুলসুমের পার্লালের মালিক সেলিনা ও সেলিনার স্বামী এনায়েতের ব্যবহারে কুলসুমকে সেলিনার পার্লারে কাজ না করে অন্য পার্লারে কাজ করা বা কাজ না করে সংসার করা এবং হাজারীবাগ এলাকা থেকে অন্যত্র গিয়ে বসবাসের প্রস্তাব দেয়। এনিয়ে তাদের দুই জনের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায় গত ১৮ জানুয়ারী আরিফ তার স্ত্রী কুলসুমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে ২০ জানুযারী এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি অভিযোগ করে কুলসুম।
এদিকে, ওই দিনই (গত ২০ জানুয়ারী) কুলসুমকে পিটানোর কারণে সেলিনার স্বামী এনায়েত হাজারীবাগ বাজারে আরিফকে গালাগাল করে এবং বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরিফকে দেখে নেওয়ার হুমকী দেয়। পরে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে প্রথমে হাজারীবাগ থানা থেকে এসআই পরিচয়ে আরিফের বড় ভাই আলমগীরকে ফোন দেয় এবং আরিফ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে আছে বলে জানিয়ে তাকে ঢাকা হাজারীবাগ যেতে বলে। ভাই অসুস্থতার খবর পেয়ে আলমগীর মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পায়। পরে হাজারীবাগ থানায় গেলে থানার সামসুর রহমান নামে এক পুলিশ সদস্য আরিফ অতিরিক্ত নেশা করায় মৃত্যু হয়েছে এবং তিনি সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় শরীরে কোন আঁঘাতের চিহ্ন পাননি জানিয়ে আরিফের বড় ভাই আলমগীরকে একটি সাদা কাগজে সই দিতে বলেন এবং অযথা মামলা মোকদ্দমা না করতে উৎসাহিত করেন। পুলিশ সদস্যের এমন আচরনে আলমগীরের সন্দেহ হয় এবং তার ভাইকে না দেখে তিনি কোন কাগজে সই করবেন না বলে জানান। এ নিয়ে ওই পুলিশ সদস্যের সাথে উচ্চস্বরে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি পাশের কক্ষে থাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কর্ণপাত হলে তিনি কারণ জানতে চান এবং আরিফকে তার ভাইদের না দেখিয়ে কোন কাজ না করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বলেন এবং সেখানে যান এবং সেখানে গিয়ে আরিফ বিষ খেয়েছে বলে জানতে পারেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে থানায় ফিরে আলমগীরের সিদ্ধান্ত জানতে চান ওসি। আলমগীর তার ভাইকে না দেখে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবেনা জানালে ওসি তাকে তার ভাইকে দেখার নির্দেশ দেন। কিন্তু, রাত দেড়টা পর্যন্ত আলমগীর ও তার ভাইদেরকে আরিফের মরদেহ না দেখিয়ে পুলিশ সদস্য সামসুর রহমান আরিফের মরদেহের ছবি দেখিয়ে পূণরায় বলেন, আরিফ নেশা করেই মারাগেছে বলে জানান এবং ওই সাদা কাগজে সই দিতে বলেন। পরে ওসি রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য তার কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় আরিফের মরদেহ না দেখানোর কথা জানালে ওসি কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হলে আলমগীর, অপর দুই ভাই জাহাঙ্গীর ও মনির হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আরিফের মরদেহের ঘাঁড়, পিঠ, হাঁত এবং কোমরে আঁঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে লাশ পোষ্টমর্টেম করার ইচ্ছা ওসিকে জানান। পরে পুলিশ মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোষ্টমর্টেমের জন্য মর্গে পাঠায়।
গতকাল ২১ জানুয়ারী মঙ্গলবার বাদ এশা সোনারগাঁওয়ের মোগরপাড়া ইউনিয়নের সোনারগাঁও সরকারী কলেজ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় বড় সাদিপুর কবরস্থানে আরিফের লাশ দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে আরিফের বড় ভাই আলমগীর হোসেন সরদার জানান, আরিফের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাগ দেখে আমার ছোট ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তবে, কারা হত্যা করেছে যেহেতু সেই বিষয়টা জানিনা তাই পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট আসলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিব। আর যদি তাকে হত্যা করা না হয়, তাহলে কোন নিরাপরাধ কাউকে কেন হেনস্তা করবো।
Post a Comment