মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বে ফোনে ডেকে কুপিয়ে জখমের ৪দিন পর মৃত্যু
সোনারগাঁও দর্পণ :
মাদক ব্যবসার পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখমের ৪দিন পর শাহজাহান (৩১) নামে এক যুবকের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীর প্রাইম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। যদিও ঘটনার দিন গত ২৮ নভেম্বর এ ঘটনায় নিহতের মা রিনা বাদি হয়ে ২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬/৭ জনকে আসামী করে সোনারগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে, ছেলের মৃত্যুর পর তার বাবা আল ইসলাম বাদি হয়ে সাত জনের নাম উল্লেখ করে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানাগেছে, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ছোট কোরবানপুর গ্রামের হাসুর ছেলে অভিযুক্ত ইমরান (৩৫), শান্তিনগর গ্রামের রোমানের ছেলে বিজয় (৩৪), ছোট কোরবানপুর গ্রামের রাসেল (নিহত সন্ত্রাসী গিট্টু হৃদয়ের বোনের স্বামী) (৪২), খাসেরগাঁও গ্রামের রুবেল, একই গ্রামের আনোয়ার ও নূর হোসেন, একই গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে বাবু (২৪) একই ইউনিয়নের মঙ্গলেরগাঁও দুধঘাটা গ্রামের আল ইসলামের ছেলে শাহজাহানকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুন-জখমের হুমকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্ত আসামীরা রামদা, ছেনা, চাকু, ছুরি, চাপাতি, এস এস পাইপ, লাঠি সোঠাসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গত ২৮ নভেম্বর বিকাল অনুমান প্রায় ৫টার দিকে কোরবানপুর মাতলাপাড়া কবরস্থান সংলগ্ন বালুর মাঠে শাহজাহানকে এলোপাথারীভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত আহত করে। তাদের মধ্যে আসামী ইমরান শাহজাহানের বাম হাতের কব্জির রগ কেটে ফেলে। আসামী বিজয় চাপাতির আঘাঁতে শাহজাহানের পিঠের বাম দিকে এবং অন্যান্য আসামীরা ছেনদা, চাপাতি দিয়া কুপিয়ে শাহজাহানের বাম উরুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় শাহজাহান মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইমরান শাহজাহানের প্যান্টের ডান পকেট থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় আহত শাহজাহানের আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে আসামীরা খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এ ঘটনা জানার পর তিনি (বাদি শাহজাহান) সাথে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১ ডিসেম্বর রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত প্রাইম হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মারা যায়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছোট কোরবানপুর গ্রামের সাফায়াত উল্লার ছেলে রাসেল তার স্ত্রীর ভাই এক সময়ের সোনারগাঁওয়ের মূর্তমান আতঙ্ক হৃদয় ওরফে গিট্টু হৃদয় ক্রস ফায়ারে নিহত হওয়ার পর ছোট কোরবানপুর এলাকায় মাদকের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। এমনকি নৌ চাঁদাবাজির পাশাপাশি নদী পথকে মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করে। সেই গ্রæপের অন্যতম সদস্য ছিলেন নিহত শাহজাহান। এক সময় শাহজাহান তার নিজ এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদকের ব্যবসা শুরু করলেও মাদক পাইকারী হিসাবে রাসেলের কাছ থেকেই ক্রয় করতো। সেই মাদকের টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ফোনে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে আহত করে। পরে গতকাল ২ ডিসেম্বর চিকিসৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল বারি বলেন, এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।