সোনারগাঁও দর্পণ :
সোনারগাঁওয়ে নতুন সেবা হাসপাতালের ফার্মেসী কর্মচারী জহিরুল ইসলাম জহির (৪০)’র নিথর দেহ হাসপাতালের ঘুমানো রুম থেকে বুধবার সকালে উদ্ধার করেছে সোনারগাঁও থানা পুলিশ। জহিরের মরদেহ উদ্ধারের পর তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা অভিযোগ করেন, জহিরকে পরিকল্পিতভাবে হাত-পাঁ বেঁধে হত্যা করা হয়েছে।
পরে ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালের মালিক মনিরুল ইসলাম, দুই ম্যানেজার, একজন চিকিৎসকসহ মোট ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে নিহত জহিরের স্ত্রী তাহিরা শবনম জুবাইদা বাদি হয়ে হাসপাতালের মালিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
জহির নিহতের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বন্ধু, স্বজন, ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং স্থানীয় এলাকাবাসী তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে। ঘটনাটির পেছনের প্রকৃত কারণ খুঁজতে ‘সোনারগাঁও দর্পণ’ এক অনুসন্ধান চালায়। ‘সোনারগাঁও দর্পণ’র অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে বেশ কিছু অজানা তথ্য। যা অনেকেরই অজানা। অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘সোনারগাঁও দর্পণ’র কথা হয় নিহত জহিরের বন্ধু, স্বজন, ঘনিষ্ট আত্মীয়, হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে। তবে, অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট তথ্যদাতাদের নাম-পরিচয় সংগত কারণে গোপন রাখা হলো।
এখন মুল কথায় আসা যাক। প্রথম কথা হলো - তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ আনা হলো, তা কতটুকু যুক্তিসংগত।
সাধারণভাবে প্রশ্ন আসে, একজন ব্যক্তিকে যদি কেউ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে, হত্যা করতে যে ধরণের ঘটনা বা কারণ থাকা দরকার, সে ধরণের কোন ঘটনা বা কারণ কি জহিরের সাথে কারো ছিল ?
‘সোনারগাঁও দর্পণ’র অনুসন্ধানে সে ধরণের কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি নিহত জহিরের স্ত্রী থানায় যে লিখিত অভিযোগ করেছেন, সে অভিযোগেও তেমন কোন কারণ উল্লেখ করেননি।
‘সোনারগাঁও দর্পণ’র অনুসন্ধানে খোঁজ করেছে আটককৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়েও। কিন্তু আটককৃত বা অভিযুক্তদের বিষয়ে তেমন কোন কারণ অর্থাৎ একজন মানুষকে হত্যা করার মতো চরিত্রের বা আচরণের বলে কেউ কোন তথ্য জানাতে পারেনি।
‘সোনারগাঁও দর্পণ’ মনে করে, দোষ-গুণেই মানুষ। কোন মানুষের যদি দোষই না থাকে তাহলে তার নাম ওলিদের খাতায় লিপিবদ্ধ করেন আল্লাহ সোবহান তায়ালা।
জহিরের স্কুল জীবনের একাধিক বন্ধু’র সাথে কথা হলে তারা জানায়, জহির নিঃসন্দেহে একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। সে কখনো কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ বা খারাপ আচরণ করতেন না। তবে, স্কুল জীবন থেকেই জহির মাদকের প্রতি একটু বেশি আসক্ত ছিল। শুধু তা-ই নয়, সে হাসপাতালে থেকেও প্রায় প্রতি রাতেই ইনজেকশন দ্বারা মাদক গ্রহণ করতো। বিষয়টি হাসপাতালের মালিককে অন্যান্য সহকর্মীরা জানায়। মালিক মনির হোসেন একাধিক দিন তাকে এ সকল কাজ না করার জন্যে বুঝাতেন। মাদক ছেড়ে সুস্থ পথে জীবন গড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একটি বিশ্বস্ত সূত্র দাবি করে, জহিরের লাশের পাশ থেকে লাশ উদ্ধারের সময় নেশাজাতীয় একটি ইনজেকশনও উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রশ্ন আসে - জহিরকে যদি হত্যা করা না হয়, তাহলে তার শরীরে ছোঁপ ছোঁপ দাগ কিসের ? এছাড়া তার পায়েও দড়ি বা রশি দিয়ে বাঁধার দাগ ছিল।
চিকিৎসকের মতে, নিহত জহিরের শরীরে যে ছোঁপ ছোঁপ দাগ ভেসে উঠেছে তা ওষুধের রিয়েকশন থেকে হতে পারে। অর্থাৎ সে রাতে যে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করতো সে ইনজেকশনের মাত্রা হয়তো বেশি হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে আর সে দাঁগের কারণ হতে পারে সেটি।
আর জহিরের পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার দাগ এক পায়ে পাওয়া গেছে। তা হলো বাম পায়ে। যে পায়ে ৫টি ইনজেকশন পুশ করার চিহৃও রয়েছে। যদি তাকে হত্যা করা হতো তাহলে দুই পা বাঁধা থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশ জহিরের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধারের পাশাপাশি হাসপাতালের সিসিটিভি’র যে ফুটেজ উদ্ধার করেছে, সে সিসিটিভি ফুটেজেও তাকে হত্যা করা বা সন্দেহজনক কাউকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি বা হত্যা করার মতো কোন কারণ দেখা যায়নি।
তবে, তার মোবাইলে প্রতি রাতে বিভিন্ন জনের সাথে চ্যাটিং করার আলামত পাওয়া গেছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।
সবকিছুর পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত হলফ করে কিছুই বলা সম্ভব নয়। ‘সোনারগাঁও দর্পণ’ শুধুমাত্র তার অনুসন্ধানটি পাঠকদের সাথে শেয়ার করেছে মাত্র। তবে, ‘সোনারগাঁও দর্পণ’ মনে করে, সত্যিই যদি জহিরকে হত্যা করা হয় তাহলে, প্রকৃত দোষিরা যেন অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
Post a Comment