সোনারগাঁও দর্পণ :
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম বলেছেন, তিনি সব সময়ই আওয়ামী লীগের ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তিনি কখনোই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাননি। আর কখনো যাবেনও না। এছাড়া দলও তাকে কখনোই বহিস্কার করেনি। সম্প্রতি (৬ মে ২০২২ ইং মধ্যরাত) সোনারগাঁও দর্পণ’র সাথে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এমন দাবি করেন।
তৃণমুল থেকে ওঠে আসা সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান এ নেতা বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার স্বতন্ত্র প্রার্থীতাকে অনেকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছি আখ্যায়িত করে আমার প্রতি দলীয় সিন্ধান্তের বিরোধী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেছেন। এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। দল আমাকে ক্লোজড কেেরছ। আমাকে কেন্দ্রে ডাকা হয়েছে, আমি জবাব দিয়েছি। কেন্দ্র আমার জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে ক্ষমা করেছেন। আমি এখনও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
কালাম বলেন, আসলে রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে এটা স্বাভাবিক। আমি কখনোই ব্যক্তিগতভাবে দ্ব›েদ্ব জড়াইনি। অনেকের সাথে আমার রাজনৈতিক মতপার্থক্য বা রাজনৈতিকভাবে দ্ব›দ্ব থাকতে পারে কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কারো সাথে আমার কোন দ্ব›দ্ব আছে একথা কেউ বলতে পারবেনা।
প্রয়াত মোশারফ হোসেনের সাথে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হওয়া কি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া নয় ? এমন প্রশ্নের জবাবে কালাম বলেন, আমি মোশারফ ভাইকে সব সময়ই শ্রদ্ধা-সম্মান করতাম। আমাকে তিনি কখনোই কেন জানি রাজনীতিতে মেনে নিতে পারেননি। তিনি আমাকে তার পরিবার বিরোধী মনে করতেন। আর আমি যখন প্রয়াত আবুল হাসনাত সাহেবের অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নিয়ে আসলাম। তাকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পরিচিত করতে শুরু করলাম, তারপর থেকে একমাত্র কায়সার ছাড়া তার পরিবারের সদস্যতো বটেই, তার বাড়িতে যে কুকুর ছিল সেও আমার বিরোধীতা শুরু করে।
এ সময় মাহফুজুর রহমান কালাম তার ছাত্র জীবনে আওয়ামী রাজনীতি জড়ানো থেকে শুরু করে অদ্যবদি দীর্ঘ ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করে আক্ষেপের সাথে সোনারগাঁও দর্পণ’কে বলেন, মোশারফ ভাই আমাকে সবসময় যেখানেই দেখতেন আমার মৃত বাবাকে তুলে আমাকে বকাঝকা করতেন। আমাকে সকলের সামনে হেয় করার চেষ্টা করতেন। আমার মা’কে গালাগাল করতেন। আমি এগুলো রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করেছি। কিন্তু আমি যখন প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হই তিনি তখন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি কি করলেন, ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী হলেন। আমরা দু’জনেই দলীয় মনোনয়ন চাই। দল তখন তৃণমুলের ওপর ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করতে বললেন। কায়সার তখন নতুন এমপি। আমার দুঃখ লাগে, আমি যাকে তার পিতার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে তার পরিবারের সবার কাছে খারাপ হয়েছি তিনি আমাকে সমর্থন না দিয়ে পরিবারের সদস্যকে সমর্থন দিয়েছেন। চাচার পাশে ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে আসায় যে চাচা এবং যে পরিবারের প্রতিটি সদস্য তার বিরোধীতা করেছে সে পরিবার আর পরিবারের সদস্যরা তার কাছের মানুষ হয়ে যায়।
সে সময় আওয়ামী লীগ আর কায়সারের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কায়সার তার চাচাকে মৌনভাবে সমর্থন দেয়ায় আমি পরাজিত হই। পরবর্তীতে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আমার প্রতি তার ক্রোধ আরও বেড়ে যায়। তিনি যেখানেই আমাকে দেখতেন, সেখানেই তিনি আমাকে আর আমার মৃত বাবাকে নিয়ে বাঁজে বাঁজে কথা বলে, আমাকে অপমাণিত করার চেষ্টা করতেন। এ সকল বিষয় বিভিন্নভাবে আমার মা’য়ের কাছে যায়। আমার যে বাবা কখনো রাজনীতি করেননি, সে বাবাকে নিয়ে যখন বকাঝকা আর খারাপ কথা বলে সে ক্ষোভ থেকেই আমার মা আমাকে পরবর্তীতে মোশারফ ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তখন দুর্ভাগ্যক্রমে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত আসে। আমিও আমার মায়ের কথা ফেলতে পারিনি। মায়ের আদেশ রাখতে গিয়ে মোশারফ ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হই। আর এ বিষয়টি আমি দলের নীতি নির্ধারকদের বুঝাতে সক্ষম হলে জননেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমাকে ক্লোজড করা থেকে মুক্তি দেন।
এখানে অনেকের বুঝার ভুল আছে বলে মনে করেন কালাম। তিনি বলেন, দল আমাকে ক্লোজড করেছে অর্থাৎ সাময়িকভাবে আমাকে দলীয় কাজ করতে নিষেধ করেছে। বলেনি আমাকে দল থেকে বহিস্কার করেছে। দল যখন আমাকে ডেকেছে, আমি আমার জবাব দিয়েছি তখন তারা সবকিছু শুনে-বুঝে ক্লোজড উইথড্রো করেছে। তাহলে কিভাবে আমাকে বহিস্কার করা হলো তা আমার বোধগম্য না। আসলে ক্লোজড সশব্দটিকে কিছু স্বার্থান্বেসী মহল অন্যভাবে উপস্থাপন করে রাজনীতি থেকে আমাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে মাত্র। যার প্রমাণ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি থেকে আমাকে বাদ দেয়া।
Post a Comment