সোনারগাঁও দর্পণ :
সোনারগাঁও আওয়ামী লীগ কি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ? না-কি যোগ্য নেতার অভাব ? সম্প্রতি বিএনপি’র দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সোনারগাঁওয়ে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে যোগদানের পর সরকারকে চরম বিষেদাগারের পর উপজেলা আওয়ামী লীগের নিরব কর্মকাণ্ডে এমন প্রশ্ন তুলেছেন খোদ সোনারগাঁও আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে কোন সময় বিএনপি সোনারগাঁওয়ে এতটা স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজনৈতিক কোন সভা-সেমিনার করতে পারেনি বা করতে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, মেঘনা শিল্পাঞ্চলে থাকা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের নিশ্চুপ কর্মকাণ্ড।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের বেশক’জন তৃণমুলের নেতারা ক্ষোভের সাথে জানান, চলতি মাসের জানুয়ারীতে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নানকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেনকে যুগ্ম আহবায়ক করে সোনারগাঁও বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি ঘোষণার মাত্র দুই মাসের মধ্যে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে কমিটি করতে সক্ষম হয়েছে উপজেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটি। আহবায়ক কমিটি ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে পিরোজপুর ইউনিয়নে সম্মেলনের মাধ্যমে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে সভাপতি ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম সন্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। সে সন্মেলনে রিজভী সরকারের কড়া সমালোচনা করে বিষেদাগার করেন।
ওই সম্মেলনের ঠিক এক মাস পর গত ৩০ এপ্রিল উপজেলা বিএনপি’র আয়োজনে মেঘনা শিল্পাঞ্চলে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যেখানে সরকারের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা দেশের বিশেষ বাহিনীকে সে দেশে ভ্রমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা, দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে বিষেদাগার করেন। অথচ, মেঘনা শিল্পাঞ্চল এলাকার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বনে যাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই দেখেনি বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীদের। এমনকি পরবর্তীতে বিএনপি নেতাদরে সে সকল বক্তব্যের বিষয়ে পাল্টা কোন রাজনৈতিক বক্তব্য বা লিখিত প্রতিবাদ দিতেও দেখা যায়নি। অথচ স্বাধীনতার পর অন্ততপক্ষে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের এতোটা নিষ্ক্রিয় কর্মকাণ্ড দেখেনি তৃণমুলের নেতারা মনে করেন। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি উপজেলা আওয়ামী লীগের ?
এছাড়া এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়াকে আহবায়ক, আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে প্রথম যুগ্ম এবং ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে দ্বিতীয় যুগ্ম আহবায়ক করে উপজেলা আহবায়ক কমিটি করা হয় প্রায় দুই বছরে বেশি সময় আগে। দীর্ঘ এ সময়ে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের গঠিত আহবায়ক কমিটি তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দুরের কথা, এখন পর্যন্ত একটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন করতে পারেনি বলে তৃণমুলের নেতারা জানান।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সোনারগাঁওয়ের সন্তান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির নেতা এ এইচ এম মাসুদ দুলাল সোনারগাঁও দর্পণ’কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে যে অবাধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, সোনারগাঁও বিএনপি’র অনুষ্ঠানে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে কোন বাঁধা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠান করেছেন, তা হলো প্রধানমন্ত্রী’র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এটাই হলো গণতন্ত্র।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ আহবায়ক কমিটির ২য় যুগ্ম আহবায়ক ও পিরোজপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুমকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম সোনারগাঁও দর্পণ’কে বলেন, এটা অবশ্যই সংগঠনের দুর্বলতা নয়, নেতৃত্বের দুর্বলতা। তিনি বলেন, তার দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগকে কখনো এ রূপে দেখেননি। তিনি আরও বলেন, কালাম যখন রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন, তখন বিএনপি সরকার মসনদে ছিল। রেজাউল করিম তখন রানিং মন্ত্রী। তিনিও কোন সভা সমাবেশ করলে উপজেলা আওয়ামী লীগের আতঙ্কে থেকে সভা-সমাবেশ করতেন। মাঠে নেমে প্রকাশ্যে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করাতো দুরের কথা। আর এখন আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় আমাদের বুকের ওপর এসে বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সরকারকে বিষেদাগার করে যায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে অন্যের কাছে কি, আমি জানি না। তবে, আমার কাছে এটি লজ্জার। আর আমি এটাকে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাদের নেতৃত্বের দুর্বলতাই বলবো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁও আসনের সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সারের মোবাইলে কল করলে তিনি জানান, একটি অনুষ্ঠানে থাকায় এ বিষয়ে অনুষ্ঠান শেষে ফোন করবেন। পরে আবারও ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ আহবায়ক কমিটির আহবায়ক এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়াকে মোবাইলে কল দিলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
Post a Comment