সোনারগাঁও দর্পণ :
মেঘনা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত চরাঞ্চল সোনারগাঁওয়ের নুনেরটেকের মায়াদ্বীপের ওপর আবারো কুদৃষ্টি পরেছে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের। এবার কোন বালু মহাল নয়। মায়াদ্বীপের সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত শিশুদের অঙ্কুরে নিধন করতে সন্ত্রাসীরা আদাজল খেয়ে নেমেছে তাদের সুশিক্ষিত করার একমাত্র বিদ্যালয় সূবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের নির্মিত মায়াদ্বীপ জেলে শিশু পাঠশালা গ্রাসে।
এরই অংশ হিসেবে ওই স্কুলের শিক্ষকের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তী তাদেরকে শারীরিক নির্যাতন ও ঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। খবরপেয়ে রাতেই ওই শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য শরীফ।
অভিযোগ থেকে জানাগেছে, সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক রঘুনাচরের মায়াদ্বীপে অবস্থিত 'মায়াদ্বীপ জেলে শিশু পাঠশালা'কে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুরা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২২ জানুয়ারী) রাত আনুমানিক পৌঁনে ৯টার দিকে স্থানীয় কাদির আলীর ছেলে হাশেম, মৃত তারু মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে আন্ডার আলী, ওসমান মিয়ার ছেলে মেহেদী, শহীদের ছেলে শাহজালাল ও শাহপরান করিমের ছেলে দ্বীন ইসলাম, ইউনুসের ছেলে রাসেল ও ফয়সাল, মোসলেমের ছেলে রাকিব, মৃত মালেকের ছেলে রাহিম আলী ও রমজান, রহিম মিয়ার ছেলে শরিফ, নুর ইসলামের ছেলে ফাহিম, একই এলাকার মাসুদ, মঙ্গল আলী আরশ আলীর ছেলে ইউসুফ আলীসহ আরও অজ্ঞাত ৭/৮ জন সন্ত্রাসী সংঘবদ্ধ হয়ে ‘মায়াদ্বীপ জেলে শিশু পাঠশালা’র শিক্ষক মরিয়ম আক্তার ওরফে পাখি (২৪) ও শরিফের ছোট ভাই রাশেদ (২০), তার মা নাসিমা বেগম (৫০)’কে দেশীয় ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে রক্তাক্ত যখম করে। এ সময় তার বোনের পরনে থাকা জামা ছিড়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। এছাড়া তার বোনের গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন এবং তার মায়ের গলায় থাকা ২ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। এছাড়া তার ভাই রাশেদের বিকাশ ব্যবসার জন্য ঘরে রাখা নগদ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় হামলাকারীদের বাঁধা দিতে গেলে হামলাকারীরা বাদির ভাই রাশেদের উড়–তে ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে আঁঘাত করে রক্তাক্ত যখমের পাশাপাশি বাদি মো. শরিফের পায়ে রোহার বড় দিয়ে আঘাত করে।
তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে তার স্বজনরা খবর পেয়ে রাতেই সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাদির এক স্বজন জানায়, রাতে আহত অবস্থায় তাদের সকলকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে পূণরায় সন্ত্রাসীরা বাদির ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়রা টের পেয়ে আগুন নিভায়।
এ ব্যাপারে সূবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কবি শাহেদ কায়েস ‘ সোনারগাঁও দর্পণ’কে বলেন, এই স্কুলের জমি অবৈধভাবে দখল করতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা দীর্ঘ দিন থেকেই অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। মায়াদ্বীপে কোন স্কুল না থাকায় তারা শিক্ষার আলো বঞ্চিত ছিল। এই স্কুলে বিনামূল্যে লেখাপড়া করে শিক্ষা গ্রহণ করছে। অনেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে নিজের অধিকার আদায় করতে শিখেছে। আর এটিই হচ্ছে স্থানীয় ভূমি দস্যুদের আক্রাশের প্রধান কারণ। তবে, যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক, অমানবিক এবং স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি আসামীদের দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানাই।
অগ্নিসংযোগের কোন আলামত তিনি পাননি জানিয়ে ঘটনাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফিরোজ রোববার (২৩ জানুয়ারী) বিকালে সোনারগাঁও দর্পণ’কে জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাবেনা।
Post a Comment