সোনারগাঁও দর্পণ :হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন সোনারগাঁও রিসোর্ট’র তিনজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে তারা সাক্ষ্য নেয়া হয়।
এরআগে সকালে কড়া নিরাপত্তায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপরদিকে, মামলায় সাক্ষী দিতে সকালেই আদালত প্রাঙ্গনে হাজির হয় সোনারগাঁও রয়্যাল রিসোর্টের সিনিয়র গেস্ট রিলেশন কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, সুপারভাইজার আবদুল আজিজ ও আনসার সদস্য রতন বড়াল।
আদালতে নাজমুল হাসান বলেন, গত ৩ এপ্রিল বেলা ৩ টার দিকে মামুনুল হক বোরকা পরা এক নারীকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে সোনারগাঁও পৌরসভার রয়্যাল রিসোর্টে যান এবং এক দিনের জন্য একটি কক্ষ ভাড়া নেন। তারা আসার আনুমানিক পৌনে এক ঘণ্টা পর পুলিশ ও সাংবাদিকরা রিসোর্টে গিয়ে মামুনুল হক ও জান্নাত আরাকে কক্ষে আটক করেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারও আধঘণ্টা পর মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টের মূল ফটক, রিসিপশন ও ব্যায়মাগারে হামলা চালান। তাঁরা মামুনুল হক ও জান্নাত আরাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ কোর্টকে জানান, পুলিশ রিসোর্টের ওই কক্ষ থেকে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মাথার চুল, টিস্যুসহ ১৭ প্রকার আলামত জব্দ করে। যে জব্দ তালিকায় আব্দুল আজিজ সাক্ষরও করেছেন। এছাড়া হোটেল থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও পুলিশ নিয়ে যায়।
রতন বড়াল কোর্টকে বলেন, মামুনুল হক গাড়িতে এক নারীকে নিয়ে রিসোর্টে ঢুকলে তারা গেট খুলে দেন। পরে তাঁরা কক্ষে যান। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে তাঁদের ছিনিয়ে নিয়ে যান।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি রকিব উদ্দিন আহমেদ সাক্ষিদের সাক্ষ দেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, পুলিশ যখন মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন, তখন মামুনুল হক বিয়ের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক ওই সময় স্বীকার করেছেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জান্নাত আরাকে তিনি ধর্ষণ করেছেন।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান মোল্লা বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণ করতে ব্যার্থ হয়েছে। তারা ঘটনার আগে ও পরের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে।
অপরদিকে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মামুনুল হককে আবারও গাজীপুরে ফেরত পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর মামলার বাদী কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে কথিত স্ত্রী জান্নাত আরাসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজতের নেতা-কর্মী ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাঁদের ছিনিয়ে নেন।
১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রয়্যাল রিসোর্টান্ডের ঘটনার ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁও থানায় হাজির হয়ে জান্নাত আরা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।