সোনারগাঁও দর্পণ :
আগামী ২৮ নভেম্বর সোনারগাঁও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন ২০২১ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে পিরোজপুরসহ ৪টি ইউনিয়নের নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে পিরোজপুর ইউনিয়ন সবার দৃষ্টিতে। কারণ এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এখানকার মেম্বার প্রার্থীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে বেশ কৌতুহল।
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী ৩জন। মোট ভোটার ৩ হাজার ৫৮৪ জন। প্রার্থীরা হলেন তালা প্রতিকের খোরশেদ ফরাজী, মোড়গ প্রতিকের জাকির হোসেন এবং আপেল প্রতিকের সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। ভোটারদের মধ্যে সাংবাদিক আনোয়ার ন্যায়-নীতিতে আটল থাকলেও মাঠে টাকা-পয়সা ছাড়তে পারছেননা বলে স্থানীয়রা জানান। অপরদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অর্থ ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন অনেকে। তবে, স্থানীয়রা ন্যায়-নীতিবান এবং ভাল মানুষ হিসেবে আনোয়ার হোসেনকেই বিজয়ী করবেন বলে বেশিরভাগ স্থানীয়দের কাছে থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। এ হিসেবে ১নং ওয়ার্ডে আপেল প্রতিক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্বদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানাযায়।
ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে মোট প্রতিদ্বন্দ্বি ৫জন। প্রার্থীরা হলেন তালা প্রতিক পাওয়া মো: মোজাম্মেল হক, ফুটবল প্রতিকের আলম, কল প্রতিকের জাহাঙ্গীর হোসেন, আপেল প্রতিকের মার্জান ও মোড়গ প্রতিকের আব্দুল জলিল। ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬৯৭ জন। প্রার্থীদের মধ্যে তালা প্রতিক পাওয়া মো: মোজাম্মেল হক দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী ও সৎ ব্যবসায়ী এবং ভালো মানুষ হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শতভাগ। সে বিবেচনায় অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে এগিয়ে তালা প্রতিকের মো. মোজাম্মেল হক।
৩নং ওয়ার্ডে লড়ছেন চাচা-ভাতিজা। এরমধ্যে চাচা ও বর্তমান মেম্বার মজিবুর রহমান লড়ছেন তালা প্রতিক নিয়ে। অপরদিকে, পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভ‚ইয়ার ছেলে রাসেল ভ‚ইয়া লড়ছেন ফুটবল প্রতিকে। মজিবুর রহমান মেম্বার একাধিকবার ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে কাজ করায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। আর রাসেল মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় একাধিকবার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের টার্গেট হয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন। তিনি নির্বাচিত হলে ৩নং ওয়ার্ডকে মাদক মুক্ত করার পাশাপাশি আধুনিক ওয়ার্ডে রূপ দেয়ার ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয়দের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন। সবকিছুর পর এখন পর্যন্ত মজিবুর রহমানের চেয়ে ভোটের মাঠে রাসেল ভ‚ইয়া অনেক এগিয়ে রয়েছেন ওয়ার্ডটিতে।
৪নং ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী ৪জন হলেও মোট প্রতিদ্বন্দ্বি ৩ জন। এরমধ্যে তালা মার্কা নিয়ে লড়ছেন মাজহারুল ইসলাম মোল্লা, ফুটবল প্রতিক পাওয়া আব্দুস সাত্তার এবং আপেল প্রতিক পাওয়া আব্দুল মান্নান। ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার ২ হাজার ৯১০ জন। তিনজন প্রার্থীর মধ্যে ভোট মাঠে কারো চেয়ে কেউ কম নন। তবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব,শুভাকাঙ্খি ও ভালো মানুষ হিসেবে মাজহারুল ইসলামের রয়েছে বেশ সুনাম। তাই সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে তালা প্রতিকের মাজহারুল ইসলাম রয়েছেন অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিদের চেয়ে এগিয়ে।
৫ নং ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী ২জন। এজন হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার প্রয়াত তাজুল ইসলামের ছেলে ও ৫নং ওয়ার্ডে বর্তমান মেম্বার নুরু উদ্দিন নুরু। তার প্রতিক মোড়গ। অপরদিকে তার একমাত্র প্রতিদ্ব›িদ্ব একই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার গোলাম মোস্তফা। তিনি পেয়েছেন ফুটবল। ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার ২ হাজার ৩৯৮ জন।
সাবেক মেম্বার মোস্তফা ইউপির সদস্য থাকাকালীণ কিছু দুর্ণাম থাকলেও তার একটি জনপ্রিয়তা রয়েছে ওয়ার্ডটিতে। তবে, বয়সের ভাড়ে প্রায় নুজ্য হওয়ায় নির্বাচিত মহলে তার কাজ করার ক্ষমতা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
অপরদিকে, নুর উদ্দিন নুরু’র বাবা মারা যাওয়ার পর নির্বাচনে সে মেম্বার হিসেবে বিজয়ী হয়ে এখন পর্যন্ত ৫ নং ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ন করায় ইতোমধ্যে তার একটি জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। এছাড়া তরুণ হওয়ায় সব মহল ও শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে সে আবারো নির্বাচিত হবেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। সর্বোপরি গোলাম মোস্তফার চেয়ে নুর উদ্দিন নুরু অনেকটাই এগিয়ে আছে ভোট মাঠে।
আর পিরোজপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে আলোচিত ওয়ার্ড ৬ নাম্বার। এখানে আপেল প্রতিক পাওয়া ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আব্দুল হালিম লড়ছেন স্থানীয় দানবীর হিসেবে পরিচিত পরিবার সরকার বংশের মোড়গ প্রতিক পাওয়া রফিকুল ইসলাম সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে। এখানে মোট ভোটার ২ হাজার ৮৮৫ জন।
প্রার্থীদের মধ্যে আব্দুল হালিম সাবেক মেম্বার হলেও মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের ব্যবসা ও তার স্বজনদের স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া সার্বিকভাবে ওয়ার্ডের তেমন কোন উন্নয়ন করতে না পারায় এর পরের বার নির্বাচন করলেও তাকে পরাজিত হতে হয়েছে বলে স্থানীয়দের বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন। তাছাড়া, হালিমকে বিজয়ী করতে ছয়হিস্যার সরকার পরিবারের রয়েছে বিরাট অবদান। এছাড়া সাবেক মেম্বার আলমগীর কবির এবার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের পর তা উঠিয়ে নিয়ে রফিকুল ইসলাম সরকারকে সমর্থন দেয়ায় রফিকুল ইসলাম সরকারের জনপ্রিয়তার অবস্থান আরো পোক্ত হয়। অপরদিকে, সরকার পরিবার অত্র এলাকায় দানবীর পরিবার হিসেবে আগে থেকেই পরিচিত হওয়ায় তাকে বিজয়ী করতে পারলে সুখে-দুঃখে সবাই পাশে পাবে বলে তাকেই সমর্থন দিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। তাই সার্বিক বিবেচনায় রফিকুল ইসলাম সরকার মোড়গ প্রতিক নিয়ে হালিমের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন বলেই স্থানীয়দের ধারণা।
Post a Comment