সোনারগাঁও দর্পণ :
যদি প্রশ্ন ওঠে যানজট পছন্দ করেন (!) এমন একজন কি আছেন ? বোধ করি সমস্বরে, এক বাক্যে, উচ্চস্বরে আওয়াজ উঠবে ‘না’। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, সোনারগাঁওয়ের স্থানীয় বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কি এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে যাওয়া-আসা করেন না ? না-কি যাওয়া আসার সময় সবসময়ই প্রটোকল নিয়ে চলেন (!)। যদি প্রটোকল দিয়ে যাওয়া-আসা না-ই করেন, তাহলে তারা কি কখনো স্থানীয় এলাকায় নিত্যদিনের সঙ্গি যানজটের শিকার হননি। আর যদি যানজটের শিকার হয়ে থাকেন বা যানজটে পরে থাকেন, তাহলে কেন সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এ যানজটের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না ?
স্থানীয় এবং জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সোনারগাঁওয়ের অসহনীয় যানজটের বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং ভুক্তভোগীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোনারগাঁওয়ের যানজট বিষয়ে তাদের তীক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনের বহু চেষ্টাও আমরা দেখি। কিন্তু যেই লাউ, সেই কদু। কখনো কখনো এমনটা মনে হয়, যেন যানজটের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা চোখে কাঁঠের চশমা পড়েছেন।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন সিএনজি, মিশুক, অটো চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীর সাথে যানজট বিষয়ে আলাপ করেছে সোনারগাঁও দর্পণ। তুলে আনতে চেষ্টা করেছে যানজটের কারণ ও সমাধানের পথও। তাদের মতে, শুধু সোনারগাঁওয়ের প্রাণ কেন্দ্র নামে খ্যাত মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার পূর্ব ও পশ্চিম পাশেই নয়। এমন যানজট সোনারগাঁওয়ের বেশ কিছু স্থানেই দেখা যায়। বিশেষ করে মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে, মোগরাপাড়া পুরান বাজার, পিরোজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলের গাঁও বটতলা বাজারের পাশে পাঁচআনী যাওয়ার সড়ক, উদ্ববগঞ্জ বাজার, কাঁচপুর, সাদিপুর ইউনিয়নের নয়াপুর বাজার, আনন্দবাজার এলাকাতেও একই অবস্থা বিরাজমান। তবে, মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশে থাকা থানা রোড এবং কলেজ রোডে যানজট এ দুটি পথ দিয়ে যাতায়াতকারীদের নিত্যদিনের সঙ্গি।
যানজটের কারণ হিসেবে সিএনজি, মিশুক, অটো চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দায়ি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহৃত বিশালাকৃতির যানবাহন দিনের বেলায় চলাচল, সরু রাস্তায় বিশালাকৃতির এ সকল যানবাহন থামিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য উঠানো-নামানোর কাজ করা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন রকম অনুমতি না নিয়ে ইচ্ছে মতো বিভিন্ন যানবাহন নামানোয় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি যানবাহন হওয়া, সড়ক পরিস্কার করার নামে সড়ক পরিস্কার না করে লোক দেখানো কাজ দেখিয়ে চাঁদা তোলার পর সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতরা চলে যাওয়া, যানবাহন চালনা নিয়ে প্রতিযোগিতা করা এবং নির্দিষ্ট কোন গাড়ি স্ট্যান্ড না থাকাকে।
তারা আরও জানায়, চাঁদা তোলার কাজে জড়িতরা মুলত স্থানীয় বিশেষ একটি মহলের নির্দেশে বিভিন্ন গাড়ি থেকে টাকা আদায় করেন। যা থেকে ভাগ পেয়ে থাকেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্তাব্যক্তি। ফলে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন আন্তরিকভাবে সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে কোন ব্যবসআথা গ্রহণ করা হয়না। মাঝে-মধ্যে যা হয় তা লোক দেখানো। কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত উচ্ছেদও করেন। তাদের দৃষ্টিতে- প্রশাসনের যখনই মাসোয়ারা পেতে বিলম্ব হয়,তখনই এ সকল উচ্ছেদ অভিযান করা হয়। যে উচ্ছেদ অভিযানে সর্বশান্ত হয়েছে অনেক পরিবারও।
যানবাহন চালক ও ব্যবসায়ীদের মতে, এ চাঁদা আদায়ের সাথে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় যানবাহনের চালকদেরও প্রতিদিন গুণতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। অথচ, এতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা না রেখে শুধুমাত্র যদি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস থেকে নির্বাহী কর্মকর্তার নিজ তত্বাবধানে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা ধার্য করে তোলা হয় এবং সে পরিমাণ টাকা যে পরিমান টাকা চাঁদা তোলার সাথে জড়িতদের বেতন হিসেবে গণ্য হবে। আর যে সকল ব্যক্তি রাস্তা বা সড়ক পরিস্কারের কাজে নিয়োজিত থাকবেন তারা যেন কোন রকম দুর্ণীতির সাথে জড়িত হতে না পারে।
যানজট নিরসনে তারা মনে করেন, এ সকল সড়ক দিয়ে দিনের বেলায় যেন কোন বড় যানবাহন (৬ চাঁকা-৮/১০/১২ চাঁকা) প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সড়কে বড় যানবাহন থামিয়ে যেন কোন পণ্য ওঠা-নামা করতে না পারে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
সড়কে অতিরিক্ত চাঁপ কমাতে অঅনুমোদিত যানবাহন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে। তবে, অঅনুমোদিত যানবাহনের অবস্থা বিবেচনায় ভালো যানবাহন নিবন্ধনের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে পারে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করেন তারা।
তাই প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সোনারগাঁও দর্পণ এর জোর অনুরোধ, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ নিন। যাতে সোনারগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ মনে করবে সোনারগাঁওয়ের স্থানীয় প্রশাসনের কর্তা আর রাজনৈতিক নেতারাও যানজট পছন্দ করেন না বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস করবে।
Post a Comment