গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় “তালিকা হচ্ছে হেফাজত-জামায়াতকে সাহায্যকারী ব্যবসায়ী-আমলাদের” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁও আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আখ্যায়িত করাসহ যে সকল অভিযোগ প্রকাশ করা হয়েছে তার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্যাডে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক বরাবর তিনি লিখিতভাবে এ প্রতিবাদ জানান।
প্রতিবাদে লিয়াকত হোসেন খোকা উল্লেখ করেন, হেফাজতে ইসলামের কোন নেতাকর্মী বা কোন কর্মকাণ্ডে তার ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কোন সম্পর্ক নেই। তবে, আল্লামা আহমেদ সফি জীবিত থাকতে তার সাথে একটি অনুষ্ঠানে এবং পরবর্তী আরও একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকার কথা স্বীকার করে বাকী কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করে।
এছাড়া, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে কুটক্তি করায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে সামনে পেলে হত্যা করার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সে ঘোষণার সাথে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান ঘটনার সাথে কোন সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেন সংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা।
এরআগে, গত ২৫ এপ্রিল “দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন” প্রত্রিকার প্রথম পাতায় “তালিকা হচ্ছে হেফাজত-জামায়াতকে সাহায্যকারী ব্যবসায়ী-আমলাদের” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁও আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে হেফাজতে ইসলামের কোন নেতা-কর্মীদের কোন রকম সম্পর্ক আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে সরকারের উচ্চ পর্যায় গঠিত গোয়েন্দা সংস্থা।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, সহিংসতা ও নাশকতায় জড়িত হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবার তাদের ‘ইন্ধনকারী ও অর্থদাতাদের’ খোঁজা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে হেফাজত, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিকে অর্থদাতা ব্যবসায়ী, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া আমলা এবং পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারেও।
গোয়েন্দা নজরদারিতে যে কয়েকজন রয়েছেন সে সন্দেহের তালিকায় নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার নামও রয়েছে। বিষয়টি সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে শুধু লিয়াকত হোসেন খোকাই নয়, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন কর্তব্য পালনে কতটা সঠিক ভূমিকা রাখছে তা-ও দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
হেফাজতের তান্ডবকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতায় সোনারগাঁও থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
নাম প্রকাশ না করে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও আমলা রয়েছেন যারা সব সময় সরকারি দল করেন। তারা বিগত সময়ে কিংবা তিন বছর আগেও প্রকাশ্যে বিএনপি-জামায়াতকে অর্থ জোগান দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সরকারের ভিত মজবুত হওয়ায় তারা গোপনে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামকে অর্থ দিয়ে থাকেন। কারণ সরকার অস্থিতিশীল থাকলে তাদের লাভ হয়। সে কারণেই এখন হেফাজতের ওপর ভর করেছে। তাই অর্থ দিয়ে তান্ডব সৃষ্টি করা এবং দেশের আলেম সমাজকে আওয়ামী লীগ সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে শুধু ব্যবসায়ী ও আমলারাই নন, সোনারগাঁ রিসোর্ট কান্ডে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার ইন্ধন রয়েছে বলে একাধিক সংস্থার হাতে তথ্য এসেছে। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই হেফাজত ঘেঁষা। স্থানীয় হেফাজতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামীর প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলে সোনারগাঁও পৌরসভার আমিনপুর মাঠে এক সমাবেশে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে উদ্দেশ করে বলেছেন, মি. ম্যাক্রোঁকে সামনে পেলে তিনি হত্যা করতেন। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এ বক্তব্যের ১৩ মিনিটের একটি ভিডিও তার ফেসবুক পেজে আপলোড করেছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে লিয়াকত হোসেন খোকা বলছেন, ‘আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, আজকে আমার প্রিয় নবী সম্পর্কে যারা কটূক্তি করবে, ব্যঙ্গ করবে, আমি মুসলমান হিসেবে বলতে চাই, আমি কোনো সংসদ সদস্য না এখন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীকে (প্রেসিডেন্ট) বলতে চাই, আজকে তুই যদি আমার সামনে থাকতি, আমি তোকে হত্যা করতাম। হত্যা করে আমি ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে যেতাম।
Post a Comment